গুয়াস পেইন্ট কি এবং কেনো?
গুয়াস এক ধরনের জলরং। তবে প্রথাগত জলরঙের সাথে এর পার্থক্য হল এর রঞ্জকে অতিরিক্ত চক জাতীয় পদার্থের মিশ্রণ থাকে বলে এটি একটি অস্বচ্ছ মাধ্যম। বাইন্ডার হিসেবে এখানেও গাম অ্যারাবিক ব্যাবহার হয়ে থাকে। গুয়াসের ব্যাবহার আদিম যুগের গুহা চিত্র থেকে শুরু করে বর্তমান কাল পর্যন্ত দেখা যায়। এছাড়া তেল রং আবিষ্কারের আগে ইউরোপিয় শিল্পীরা গুয়াসকে ডিম, মধু , দুধ ও বিভিন্ন উদ্ভিজ আঠার সাথে মিশিয়ে তাদের শিল্প সৃষ্টিতে ব্যাবহার করেছেন। প্রাচীন ইজিপশিয়ান পেইন্টিং ও উপমহাদেশের মুগল মিনিয়েচার পেইন্টিয়ে গুয়াসের ব্যাবহার লক্ষণীয়। বিংশ শতকের ইউরোপ ও আমেরিকার কমার্শিয়াল আর্টে গুয়াসের ব্যাবহার অনেক বেড়ে যায়। পোষ্টার, বইয়ের প্রচ্ছদ, কমিক বই ,লোগো ও অন্যান্য ডিজাইন সহ নানান কাজে এর বহুল ব্যাবহার আমরা দেখতে পাই। কমার্সিলাল কাজে অধিক ব্যাবহারের ফলে বাজারে এর নাম পোস্টার পেইন্ট হয়ে যায়। যা বর্তমানে পোস্টার কালার হিসেবে আমরা আমাদের স্থানীয় বাজারে পেয়ে থাকি। এছাড়া টিউবেও গুয়াস রং কিনতে পাওয়া যায়। অনেকের মনেই একটা প্রশ্ন আছে জলরং ও গুয়াস বা পোস্টার কালারের মধ্যে আসলে পার্থক্য কোথায়? এক্ষেত্রে উত্তর হলো, প্রথাগত যে সব জলরং আমরা ব্যাবহার করি ( যা মূলত টিউবে পাওয়া যায়) সেটা স্বচ্ছ ও গুয়াসের তুলনায় বাইন্ডার অনেক বেশি থাকে। আর গুয়াসে বাইন্ডার এর পরিমাণ থাকে তুলনা মূলক কম আর রঞ্জক থাকে বেশি এবং সাথে চক জাতীয় পদার্থতো আছেই। তাই এটি অস্বচ্ছ। পোষ্টার কলারেও ঠিক একই। শুধু নামের ভিন্নতা মাত্র। তবে পোস্টার কালার বা গুয়াস দুটোই আর্টিস্ট ও স্টুডেন্ট কোয়ালিটির রয়েছে। ভালো ফলাফলের জন্য অবশ্যই আর্টিস্ট কোয়ালিটি রং ব্যবহার করতে হবে। তেল রং ও অ্যাক্রিলিক এর সাথে পার্থক্য কি? #তেলরং তৈরি হয় রঞ্জক, তেল ও বাইন্ডার দিয়ে। আর ব্যাবহারের মাধ্যমও তেল। তাই তেল ও জলের পার্থক্য হবে সেটাই স্বাভাবিক। #অ্যাক্রিলিক এর প্রধান কাচামাল প্লাস্টিক। এটি একবার শুকালে আর উঠে না। কিন্তু গুয়াস শুকিয়ে গেলেও জল দিয়ে উঠানো সম্ভব। গুয়াস পেইন্টিং এর করন কৌশল : ১.গুয়াস সাধারণত কাগজে ( কার্টিজ, হ্যান্ড মেড, আর্ট পেপার, মাউন্ট বোর্ড, সুইডিশ বোর্ড ইত্যাদি) করা হয়ে থাকে। ২.ওপেক বা অস্বচ্ছ হবার কারণে গাঢ় থেকে হালকা করা যায় আবার হালকা থেকে গাঢ়ও করা যায়। ৩.আপাত দৃষ্টিতে দেখতে অয়েল পেইন্টিং এর মতনই লাগে। তবে ওয়েলের থেকে অনেকটাই ম্যাট বা অনুজ্জ্বল। ৪.খুব ডিটেইল কাজ করা সম্ভব এবং বাস্তব ধর্মী কাজে এটি বিশেষ উপযোগী। ৫. তাড়াতাড়ি শুকায় বলে আউটডোর ও কমার্শিয়াল কাজের জন্য এটি বিশেষ উপযোগী।
বিঃ দ্রঃ এর পরেও শিল্পী চাইলে যে কোনো নিয়মে, যেকোনো ভাবে এই রঙের ব্যাবহার করতে পারে। কেই যদি চায় তেল দিয়ে ক্যানভাসের উপরে গুয়াস রং ব্যবহার করবে সেটা তার একান্ত ব্যাক্তিগত ব্যাপার। উপরিউক্ত লেখায় শুধু মাত্র গুয়াসের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও চিরায়ত করন কৌশল উল্লেখ করা হল।
ভালো লাগলো ।
ReplyDelete